Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

সংস্কৃতি সমাজ কাঠামোর আভা । যশোরের সংস্কৃতির চিত্র পরিছন্ন ও অসম্প্রদায়িক। সার্বিক সংস্কৃতি অঙ্গনে যশোরকে তাই প্রাচ্যের ইংল্যান্ড বলা যায়। ১৯২৮ খ্রীঃ যশোরে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর ইন্সটিটিউট ও বিশ্বনাথ (বি-সরকার) ঘূর্নায়মান রঙ্গমঞ্চ। এটি বাংলাদেশে অহংকার, প্রাচীন, মধ্যযুগীয় ও আধুনিককালের সংস্কৃতির ধারক। যশোর ইন্সটিটিউট ও বিশ্বনাথ (বি-সরকার) ঘূর্নায়মান রঙ্গমঞ্চ এর প্রতিষ্ঠাতা যশোরের প্রখ্যাত উকিল অবিনাশ সরকার। ১৯৩০-৪০ দশকে যশোর ইন্সটিটিউট ছিল যশোর সংস্কৃতির প্রাণ কেন্দ্র কথিত কালে আজকের মত বহিরাঙ্গণে কোন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো না। পরিবার ভিত্তিক সকল অনুষ্ঠান হতো বি-সরকার হলে। তৎকালীন উজ্জ্বল মুখগুলি ছিল শ্রী শংকর ঘোষাল, শ্রী সন্তোষ ঘোষাল, শ্রী সুবোধ রায়, শ্রী সুকুমার সেন, শ্রী আনন্দমোহন, শ্রী পবিত্র দাস উল্লেখযোগ্য। শ্রী অবলাকান্ত মজুমদারের বাড়িতে সাহিত্য সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক চর্চা ছিল সেকালেও। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এখানে সাহিত্য ও সঙ্গীতের আসর বসতো। আসরে তখনকার প্রখ্যাত, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সঙ্গীত শিল্পীদের সমাবেশ ঘটতো। যাঁদের মধ্যে শ্রী মনো বসু, কবি জসিম উদ্দিন, শ্রী ধীরাজ ভট্টরাচার্য, শ্রী নিমাই ভট্টাচার্য, শ্রী বনানী চৌধুরী, শ্রী শঙ্কর ঘোষাল প্রমুখ সংস্কৃতিবান ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এক সুখময় পরিবেশ সৃষ্টি হতো। যশোরের বেজপাড়া নিবাসী ব্যবসায়ী শ্রী সুধির ঘোষ ও শ্রী গোপাল ঘোষ দুই ভাই সংস্কৃতি সেবায় নিবেদিত ছিলেন। ঘোষ পরিবারের কন্যাগণ বিথিকা ঘোষ, জুথিকা ঘোষ, সুলতা ঘোষ, শিলা ঘোষ, ইলা ঘোষ শ্রোতাদের মুগ্ধ করতেন। চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান একজন উচ্চপর্যায়ের সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। বাঁশিতে রাগ রাগিনী সুর তুলতেন যা শ্রোতা মন্ডলীকে মুগ্ধ করতো। তিনি তবলাও পরিদর্শী ছিলেন। সুর বিতানের বর্তমান অধ্যক্ষ শাহ্ মোঃ গোলাম মোর্শেদ নিয়মিত গানের আসরে উপস্থিত থাকতেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করতেন।
ভারত বিভাগ পূর্ব ও পরবর্তীকালে যশোর ইন্সটিটিউট যশোরের সংস্কৃতি বিকাশে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। এই প্রতিষ্ঠানের ছায়ায় সঙ্গীত ও নাট্য জগতের ব্যক্তিরা উপমহাদেশে নাট্যজগতে ও সঙ্গীতাঙ্গণে ইতিহাস হয়ে আছে। মাইকেল অর্কেষ্টার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত প্রণব ঘোষ, সুরধ্বণীর অধ্যক্ষ শ্রী অর্দ্ধেন্দু ব্যানার্জির নাম উল্লেখযোগ্য।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর সংস্কৃতি অঙ্গনে কিছুটা শূন্যতা থাকে। বেজপাড়ার শ্রী রজত ঘোষ শ্রী অনিল চ্যাটার্জি পরিবার দুটি সঙ্গীত সীমানায় প্রিয় ছিল। রজত ঘোষের ভাই তুলসি ঘোষ ছিলেন জনপ্রিয় সুরেলা কন্ঠের অধিকারী। চাঁচড়া এলাকার ভট্টাচার্য পরিবার, ব্যানার্জি পরিবার যশোরের সঙ্গীত অঙ্গনে যশশ্বী হয়ে আছেন। প্রথম মুসলিম সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে জনগণের সামনে আসেন ঘোপের জনাব সোবহান মোক্তার সাহেবের কন্যা জ্যোৎস্না খাতুন। পরে আসেন মাজেদা খাতুন।
যশোরের উল্লেখযোগ্য সংস্কৃতি সংগঠন হিসেবে সুরবিতান সঙ্গীত একাডেমী ১৯৫২ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে। প্রতিষ্ঠাতা সঙ্গীত শিক্ষক গোপাল চন্দ্র গোস্বামী। হারিকেনের আলোতে অস্পষ্ট ও সাদামাটা ঘরখানার বাহিরের আকর্ষন না থাকলেও ঐতিহ্যবাহী একাডেমীতে দেশ ও দেশের বাইরে অনেক নামকরা সঙ্গীতজ্ঞ নিয়মিত আসতেন। যাঁদের মধ্যে ওস্তাদ মুন্সি রইচ উদ্দিন, শ্রী যতীন ভৌমিক, শ্রী শংকর ঘোষাল, শ্রী সত্যেন ঘোষাল, শ্রী কানাই ভট্টাচার্য, ওস্তাদ মোক্তার আলী, ওস্তাদ নিজাম উদ্দিন, শ্রী গৌর গোপাল হালদার, শ্রী কালীপদ সরকার, শ্রী সুশিল সরকার, চিত্র শিল্পী এস এম সুলতান, ওস্তাদ মোশারেফ হোসেন এবং আরো অনেক প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী, সরকার, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী উল্লেখযোগ্য।
স্বাধীনতা সংগ্রামে যশোর সঙ্গীত শিল্পীদের অবদান উপেক্ষনীয় নয়্। শহীদ আলতাফ মাহমুদের ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’’ গানটির সুরকার আলতাফ মাহমুদের প্রধান সহকারী যশোরের সু-সন্তান সৈয়দ হাফিজুর রহমান। সৈয়দ হাফিজুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে থাকায় যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁকে অকথ্য নির্যাতন করে সেনাবাহিনী হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা যোগাতে কলকাতায় গঠিত হয় সংস্কৃতি স্কোয়াড। এর অন্যতম সদস্য ছিলেন যশোরের প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী বাবু গৌর গোপাল হালদার। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুচনালগ্নে শাহ্ মোঃ মোর্শেদ এর সুরারোপিত দেশাত্ববোধক সঙ্গীত মিছিলে অংশগ্রহণকারী নেতা ও কর্মীদের দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করে ও সংগ্রামে যুক্ত হতে সাহস যোগায়।
স্বাধীনতা উত্তরকালে যশোরের সঙ্গীত অঙ্গনে পুনরায় গতি পায়। বৃহত্তর যশোরে শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্মেলন হতো। বর্তমানে সুরধ্বনী, কিংশুক, চাঁদের হাট, স্বরলিপি, সরগম, সুরাঞ্জলি, সুরতীর্থ, শিশু একাডেমী সংস্কৃতি জগতকে অধিকতর বেগবান করতে অন্যতম ভূমিকা রাখছে। উদীচী যশোর সংস্কৃতি অঙ্গনে আরেকটি অবিস্মরণীয় নাম। সংস্কৃতি অঙ্গনে তাদের দৃঢ় পদক্ষেপ রয়েছে। ১৯৯৯ সালে যশোর উদীচী ট্রাজেডি আজও জাতীয় স্মৃতিপট থেকে মুছে যায়নি।